বাংলাদেশ পুলিশের এলিট ইউনিট বলে পরিচিত র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় (ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)।

মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টতই ইঙ্গিত মিলছে যে, এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহায়তা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। আর এসব সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

এইচআরডব্লিউর এশিয়া অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর হিসেবে জন সিফটনের ভূমিকা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ তার কাজই হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা।

১৭ ডিসেম্বর নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিলের সঙ্গে একটি লাইভ সাক্ষাৎকারে যোগ দেন জন সিফটন। নেত্র নিউজের ফেসবুক পাতায় সরাসরি সম্প্রচারিত এই সাক্ষাৎকারে জন সিফটন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। সাক্ষাৎকারের একটি অংশ এখন সময় পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

র‍্যাবের বিরুদ্ধে এটিই প্রথম মার্কিন পদক্ষেপ নয়

২০০৪ সালে র‍্যাব যখন গঠিত হয় তখন সংস্থাটির সদস্য নেওয়া হয় দেশের সকল বাহিনী থেকে। তবে সংস্থাটিতে সবসময়ই সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা নেতৃত্বের অবস্থানে ছিলেন। র‍্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রবণতার সঙ্গে এই সামরিকায়নের একটি যোগসূত্র দেখতে পান মানবাধিকার কর্মীরা। ২০১৩ সালে এইচআরডব্লিউর একটি প্রতিবেদনে র‍্যাবের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়। তবে তখন যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো সুসংহত আইনি ব্যবস্থা কার্যকর ছিল না।

“যুক্তরাষ্ট্র তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আইন পাস করে ২০১৬ সালে,” বলছিলেন সিফটন। “তবে আমরা ২০১৩ সালের প্রতিবেদনে দাবি জানাই যে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত মার্কিন সামরিক বাহিনী থেকে র‍্যাবের প্রশিক্ষণ সহ যেকোনো ধরণের সহায়তা বন্ধ করা। এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাই করেছিল। অর্থাৎ, সেই তখন থেকেই র‍্যাবের উপর এক ধরণের নিষেধাজ্ঞা ঝুলে ছিল।”

র‍্যাব সদস্যদের তো যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ নেই, তাহলে এই নিষেধাজ্ঞায় লাভ কী?

সংগঠন হিসেবে র‍্যাব ও সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান কমান্ডারদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তিদের যত সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রে বা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা বাসিন্দাদের হাতে রয়েছে, তা জব্দ হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে এসব ব্যক্তিদের ৫০% বা তারও বেশি মালিকানা রয়েছে, সেগুলোও বাজেয়াপ্ত হবে। অনুমতি ব্যাতিত এসব ব্যক্তিবিশেষের মালিকানা বা স্বার্থ রয়েছে এমন সম্পদ সংক্রান্ত কোনো ধরণের লেনদেন যুক্তরাষ্ট্রে বা দেশটির কোনো নাগরিক বা বাসিন্দা করতে পারবেন না।

বাংলাদেশে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে, র‍্যাব সদস্যদের সকলেরই যে যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ থাকবে, তা তো নয়। তাহলে এই নিষেধাজ্ঞা আসলে কীভাবে র‍্যাব বা নিষেধাজ্ঞার শিকার ব্যক্তিদের উপর প্রভাব ফেলবে?

লাইভ সাক্ষাৎকারের সময় তাসনিম খলিল টুইটারে জন সিফটনের করা একটি পোস্ট তুলে ধরেন, “মিথ: বাজেয়াপ্ত করার মতো যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এখতিয়ারে পড়ে এমন কোনো সম্পদ নেই। বাস্তবতা: নিষেধাজ্ঞা শুধু সম্পদকেই টার্গেট করে না। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও অন্যান্য জুরিসডিকসনের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পরিণতি আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তৃত ও চড়া।”

সিফটনের ওই টুইট ছিল মূলত মিয়ানমারের উপর আরোপ করা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে। ওই টুইটে তিনি একটি ছবিও যোগ করেন, যেখানে দেখা যায় যে, ব্যাংকের একটি লেনদেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লক হয়ে গেছে।

তাসনিম খলিল বলেন, নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন এমন কোনো র‍্যাব কমান্ডার হয়তো ভাবতে পারেন যে, আমার তো যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সম্পদ নেই। সুতরাং, আমার এত চিন্তার কারণ নেই। আমি অন্য কোনো দেশে যাবো।

তখন সিফটন বলেন, “প্রথমত, আমরা আশা করি যে, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে। ফলে এটি আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই সীমিত থাকবে না। আর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। আপনার যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সম্পদ নেই, ভালো কথা, কিন্তু সেটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র।”

“বর্তমান বিশ্বে বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক লেনদেন হয় যুক্তরাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত বৈশ্বিক ব্যাংকিং কাঠামোর মধ্য দিয়ে। সুইফট সিস্টেমও এর অন্তর্ভূক্ত। আপনার যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ থাকুক আর না থাকুক, এমন অসংখ্য প্রকারের লেনদেন আছে যা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে।”

“ধরুন, বেনজীর [পুলিশ প্রধান ও সাবেক র‍্যাব প্রধান — তিনিও নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন] সিঙ্গাপুরের কোনো কোম্পানিতে টাকা পাঠাতে চান বা কিছু কিনতে চান, যদি তারা ডলারে তাকে ইনভয়েস দেয়, তাহলে তিনি কীভাবে তা পরিশোধ করবেন? তার মেয়ে যদি যুক্তরাষ্ট্রে টিউশন পরিশোধ করা বা অন্য কোনো কারণে টাকা চান, তাহলে তিনি কীভাবে সেই টাকা পাঠাবেন?”

“শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ও পুলিশের অনেক সদস্যই শান্তিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করেছেন বা করতে চান। এটি প্রায় নিশ্চিত যে এই তালিকার কেউই শান্তিরক্ষী হওয়ার প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারবেন না, যা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় হয় — তাদেরকে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নেওয়া তো দূরের কথা। কারণ, জাতিসংঘেরও নিজস্ব যাচাইবাছাই প্রক্রিয়া রয়েছে, যা নিশ্চিতভাবেই এদেরকে এই লোভনীয় মিশনে অযোগ্য করে দেবে।”

সিফটন বলেন, “আমাদের আশা হলো, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীগুলোর অন্যান্য সদস্যরাও দেখুক যে এখানে কী হচ্ছে। তারা বুঝুক যে, তারা যদি কোনো নৃশংসতা বা মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত হয় বা অংশ নেন, তাহলে তারা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ বা কানাডায় ভ্রমণ করতে পারবেন না; তারা আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবেন না; তাদেরকে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যোগ দিতে দেয়া হবে না। অর্থাৎ, তাদের জীবনের এক বিশাল পরিসরে এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব থাকবে। প্রকৃতপক্ষেই, সম্পদ বাজেয়াপ্ত হলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হিমশৈলের চূড়া মাত্র।”

শুধু তাই নয়, পৃথক এক প্রশ্নের জবাবে সিফটন বলেছেন, র‍্যাবের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রত্যেক সদস্যের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের উপর এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন। তিনি যোগ করেন, কোনো একক সদস্য যদি জাতিসংঘকে সফলভাবে বোঝাতে সক্ষম হন যে, র‍্যাবের কোনো নৃশংসতায় তিনি অংশ নেননি, তাহলে সেটা হয়তো কাজে আসতেও পারে।

“কিন্তু, হ্যাঁ, প্রতিষ্ঠান হিসেবে র‍্যাব এখন একটি নিষিদ্ধ ইউনিট। আমি কোনো দ্বিধা ছাড়াই বলতে পারি যে, এটি প্রায় নিশ্চিত যে জাতিসংঘ এখন থেকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের গ্রহণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যাচাইবাছাই করবে। তারা দেখবে যে, এই সদস্য র‍্যাবে কাজ করেছেন কিনা। যদি দেখা যায় তিনি করেছেন, তাহলে তাকে আরও বেশি যাচাইবাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।”

জাতিসংঘ যদিও বলে যে যাচাইবাছাইয়ের কাজ স্ব স্ব দেশের কর্তৃপক্ষের হাতেই ন্যাস্ত, তারপরও জাতিসংঘ বাংলাদেশি সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করবে বলে তিনি মনে করেন।

র‍্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মার্কিন পুলিশের হাতে নিহত হওয়া এক নয়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের দুই দিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ফেসবুকে একটি ইনফোগ্রাফিক পোস্ট করেন। সেখানে ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হাতে নিহত মানুষের একটি পরিসংখ্যান দেয়া আছে। সেখানে দাবি করা হয়, প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হাতে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।

একই পরিসংখ্যান উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “আপনার দেশে (যুক্তরাষ্ট্রে) প্রতি বছর ছয় লাখ লোক মিসিং হয়। প্রতি বছর মার্কিন পুলিশ হাজার খানেক লোককে মেরে ফেলে। আপনারা এটাকে বলেন লাইন অব ডিউটি। কিন্তু আমাদের এখানে মারা গেলে বলেন এক্সট্রাজুডিশিয়াল কিলিং বা বিচার বহির্ভূত হত্যা!”

এ বিষয়ে সিফটনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাসনিম খলিল। জবাবে তিনি বলেন, এইচআরডব্লিউ যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ভিয়েতনাম সহ বিভিন্ন দেশে পুলিশের সহিংসতা বা নিষ্ঠুরতা নিয়ে কাজ করেছে ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সিফটন বলেন, “পুলিশি সহিংসতা যুক্তরাষ্ট্রে একটি গুরুতর ইস্যু। তবে এই গ্রাফিকে যেই পরিসংখ্যান দেয়া আছে তা ব্যাপকভাবে বিভ্রান্তিকর। কারণ এতে বৈধ বলপ্রয়োগের সাথে অত্যন্ত ভয়াবহ আরেকটি সমস্যাকে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। যেটা হলো পুলিশের দ্বারা বারংবার অত্যধিক বলপ্রয়োগের ঘটনা, যা প্রায়ই আফ্রিকান-আমেরিকান জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘটে থাকে।”

তার ভাষ্য, দ্বিতীয়টি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় সমস্যা। দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা, জবাবদিহিতার অভাব ও গভীরে প্রোথিত বর্ণবাদ এ জন্য দায়ী, “কিন্তু তার সঙ্গে রাষ্ট্রের নির্দেশে রাজনৈতিক কারণে কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিবিশেষকে হত্যাকাণ্ডের অনেক পার্থক্য। এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়। দু’টোরই পরিণতি হয়তো একই, অর্থাৎ মানুষের মৃত্যু ঘটে, ক্ষেত্রেবিশেষে অগ্রহণযোগ্য মৃত্যু ঘটে, তবে প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা।”

“র‍্যাব হলো একটি ইউনিট যাকে গঠন করা হয়েছে ও কাজ দেয়া হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু ঘরানার ব্যক্তিবিশেষকে আটক ও হত্যা করতে। এটি একটি সংঘবদ্ধ বা সাংগঠনিক প্রচেষ্টা। আমরা যখন র‍্যাব নিয়ে কথা বলি, আমরা কোনো বর্ণবাদ-প্রভাবিত পুলিশি নিষ্ঠুরতাকে বোঝাই না। আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু মানুষকে চিহ্নিত ও টার্গেট করে হত্যা করার কথা বলছি। আমরা আরও দেখেছি হাঁটুতে বা পায়ে গুলি করার ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে যেটা হয় যে বর্ণবাদ বা বিচার থেকে রেহাই পাওয়ার ঘটনা ঘটে।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বা এফবিআইর একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করা হতো যাদের কাজই হতো ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার বা পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীদের টার্গেট করা বা হত্যা করা, তাহলে আমরা সেদিকেও র‍্যাবের মতই নজর দিতাম। কিন্তু বিষয়টা তো তা নয়। এটি সম্পূর্নই ভিন্ন প্রেক্ষাপট।”

তিনি বলেন, গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি আইনের মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র বার্তা দিচ্ছে যে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের ইতিহাসও সুবিধাজনক নয়। ইরাক বা আফগানিস্তানে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যেখানে দেশটি যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তিনি যোগ করেন, “যখন এটি প্রমাণিত হয় যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তখন তাদেরকে বিচার বা জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়েছে। তদন্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের প্রয়োজন রয়েছে। এগুলো হয়তো একেবারে শতভাগ যথোপযুক্ত হয় না, কিন্তু অন্তত কিছু তো হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অতটুকুও নেই।”

র‍্যাবের উত্থানের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে তাসনিম খলিল র‍্যাব প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে সংস্থাটির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের প্রসঙ্গ আনেন। উইকিলিকসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, যেই সময় এইচআরডব্লিউ র‍্যাবকে “ডেথ স্কোয়াড” (জল্লাদ বাহিনী) হিসেবে বর্ণনা করছিল, সেই সময় ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত বলছিলেন যে, বাংলাদেশের কোনো সংস্থা যদি যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইর বাংলাদেশি সংস্করণের সমপর্যায়ে পৌঁছতে পারে, সেটি হবে র‍্যাব। জবাবে সিফটন বলেন, র‍্যাবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা না থাকায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করেছে এইচআরডব্লিউ। তিনি এ সময় বলেন র‍্যাবের জটিল কাঠামোও সংস্থাটির বিরুদ্ধে মার্কিন পদক্ষেপকে বিলম্বিত করেছে। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, র‍্যাবে যেহেতু বিভিন্ন বাহিনী থেকে সদস্যরা যোগ দেন এবং এক পর্যায়ে চলে যান, সেহেতু কোনো নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য ঠিক কারা কারা দায়ী, তা সুনির্দিষ্ট করা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি মত দেন, এখন যেহেতু সংস্থা হিসেবেই র‍্যাবকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, র‍্যাবের বিলুপ্তির পক্ষে ধারাবাহিক অবস্থান নেয়া সহজ হবে।